অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা
By Samik Mukhopadhyay
প্রতিদিনের মতন স্কুলে আবার ক্লাস বসেছে প্রতাপস্যারের। সৃজন, মধুমিতা, তুষার, নুসরাত, অরিজিৎ -- ক্লাসে আছে সবাই। এখন চলছে পরমাণুর গঠন আর মোলের ধারণা। স্যার সবটাই গল্পচ্ছলে খুব সুন্দরভাবে বোঝান। সবাই তাই খুব পছন্দ করে ওঁর ক্লাস। আজকেও সবাই বেশ মন দিয়ে শুনছে ক্লাসে।
হঠাৎ প্রতাপস্যার প্রশ্ন করলেন, "দেখি তোরা কে কতটা শুনেছিস ? বল তো অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান কত ?"
একসাথে সবকটা হাত উঠে গেল।
স্যার বললেন, "তুষার তুই বল দেখি।"
তুষার একদম ঝটপট বলে ফেললো, "6.023 × 10^23".
নুসরাত সাথে সাথে হাত তুলে বললো, "না। ওটা পুরোনো হিসেব অনুযায়ী। বর্তমানে 6.022 × 10^23 কে হিসেব করে চলা হয়।"
কিন্তু তুষার একটু মনক্ষুণ্ণ হলো। মুখ গোমড়া করে তার অভিযোগ, "কিন্তু স্যার দশমিকের পরে তৃতীয় ঘরে ওইটুকু পার্থক্যে কী এসে যায় ? "
স্যার হেসে বললেন, "হ্যাঁ নুসরাত একদমই তাই। আর তুষার 'ওইটুকু' কিন্তু ওইটুকু না। ওই শেষ 2 বা 3 এর পিছনে 20 খানা শূন্য আছে। তাই সেটা মোটেও হেলাফেলা করার জিনিস না।"
মধুমিতা এতক্ষণে মুখ খুলল, "কিন্তু স্যার এত বড় সংখ্যাটা অ্যাভোগাড্রো হিসেব করলেনই বা কিভাবে ? এই সংখ্যা এলোই বা কোথা থেকে ?"
কেউ প্রশ্ন করলে, বিশেষত সেই প্রশ্নে বুদ্ধিমত্তা মিশে থাকলে স্যার বড়ই খুশি হন। তিনি বললেন, "মজার ব্যাপার জানিস কী ? এই সংখ্যাটা অ্যাভোগাড্রো আবিষ্কার করেনই নি।"
সবার তো মুখ হাঁ। সমস্বরে বলে উঠলো সবাই, "তাহলে এটার নামে 'অ্যাভোগাড্রো' আছে কেন ?"
স্যার বললেন, "শোন তাহলে। এই আমেদিও অ্যাভোগাড্রো ভদ্রলোক প্রথমজীবনে ছিলেন একজন উকিল। কিন্তু পরবর্তীকালে উনি বিজ্ঞানী হয়ে যান। সে এক ইন্টারেস্টিং গল্প। পরে সুযোগ পেলে কখনো বলবো।
"উনি প্রকাশ করেন একটা হাইপোথিসিস, যা ওঁর নাম অনুসারে অ্যাভোগাড্রো হাইপোথিসিস নামে পরিচিত। এই হাইপোথিসিস অনুসারে একই তাপমাত্রায় আর একই চাপে, সমান আয়তনের দুটি গ্যাসে সমান সংখ্যক অণু থাকে। কিন্তু সেই সংখ্যা কত সেই নিয়ে উনি কিছু বলে যেতে পারেন নি।
"অ্যাভোগাড্রোর মৃত্যুর প্রায় পঞ্চাশ বছর পরে বিজ্ঞান জগতে আবির্ভাব ঘটে আইনস্টাইনের। 1905 সালে তিনি পাঁচখানা পেপার প্রকাশ করেন যেগুলো ফিজিক্সের ভিতটাই পাল্টে দেয়। এগুলোও নিয়েও পরে একদিন গল্প করবো না হয়। তো এই পাঁচখানা পেপারের মধ্যে একটা ছিল ব্রাউনিয়ান গতি নিয়ে।"
"স্যার, ব্রাউনিয়ান গতি কী ?", বললো সৃজন।
স্যার বললেন, "গ্যাস বা তরলের ক্ষেত্রে অণুগুলো কখনোই স্থির থাকে না। নানান দিকে, নানান গতিতে ছুটে বেড়ায়। নিজেদের মধ্যে ধাক্কা খেয়ে এদের গতি আর দিক পাল্টে যায়। কিন্তু ছোটা থামে না তাই বলে। এটাই ব্রাউনিয়ান গতি।
"উনিও ব্রাউনিয়ান গতি নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। সেখান থেকে উনি খেয়াল করেন যে আইনস্টাইনের সূত্র থেকে কোনো পদার্থের মধ্যে অণুর সংখ্যার একটা সম্পর্ক বের করা যেতে পারে।
"তো উনি নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে সেই কাজে সফল হলেন। এবং 1909 সালে তিনি ঘোষণা করলেন এক সংখ্যার কথা। সংখ্যাটির সংজ্ঞা হলো ' STPতে 32 গ্রাম অক্সিজেনে যতগুলো অণু থাকে।' এর নাম দিলেন তিনি 'অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা'। ওঁর হিসেবমতন অ্যাভোগাড্রো সংখ্যার মান এসেছিল 7.05 × 10^23. আসল সংখ্যার তুলনায় একটু বেশি।
"কিন্তু এটার কারণ হলো ইলেকট্রনের আধান বা চার্জের সঠিক মান তখনো জানা ছিল না। তাই ওঁর হিসেবে একটু ভুল হয়েছিল। ভদ্রলোক 1926 সালে নোবেল পুরস্কার পান।"
সবাই হাঁ করে শুনছিল। স্যার আবার বললেন, "তাহলে তুষার, 'ওইটুকু' কিন্তু মোটেও হেলাফেলা করার জিনিস না, তাই না ?"
তুষার বললো, "হ্যাঁ স্যার। সত্যিই তো।"
তখুনি ক্লাস শেষের ঘন্টা পড়ে গেল আর সবাই যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
Picture Reference :
প্যারাঁ ( বাম দিকে), আইনস্টাইন (ডান দিকে ওপরে) ও অ্যাভোগাড্রো (ডান দিকে নিচে)
অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য প্যারাঁ কর্তৃক আবিষ্কৃত সূত্র
Reference :
Comments
Post a Comment