কোভিড-19 : গুজব এবং সত্যতা

By Samik Mukhopadhyay (তথ্য সহায়তা: Projjwal Ganguly)


বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে একটা কথা খুব দৃঢ়তার সাথে বলা যায়। সেটা হলো আর যাই হোক, আমাদের চারপাশে তথ্যের কোনো অভাব তো নেইই, বরং যেন তথ্যের বিস্ফোরণ ঘটছে। আর এই তথ্যের একটা বড় অংশ ছড়িয়ে পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। হোয়াটসঅ্যাপের ফরোয়ার্ডেড মেসেজই হোক, বা ফেসবুকের ভাইরাল পোস্ট -- হাজার হাজার তথ্য আসছে আমাদের কাছে। 


কিন্তু দুঃখের বিষয় এই সমস্ত তথ্যের একটা বড় অংশ ভুল, ভিত্তিহীন এবং আমাদের সবার জন্য ক্ষতিকারক। কোভিড-19 নিয়েও চারপাশে হাজারো ভুল তথ্য ছড়িয়ে রয়েছে। বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমরা দায়বদ্ধ সমাজের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে। 


নিচে রইল কোভিড-19 রোগ সম্পর্কে কয়েকটি সঠিক তথ্য :

সবরকম বয়সের, সবরকম মানুষই কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। 

• কোভিড হলে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে সারে না। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক হলো ব্যাকটেরিয়ার জন্য। কিন্তু কোভিড ছড়ায় ভাইরাসের কারণে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন কারণ সেই সময় কোভিডের পাশাপাশি অন্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

• সার্জিক্যাল মাস্ক পরার কারণে শরীরে অক্সিজেনের অভাব বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আধিক্য কোনোটাই হয় না। তাই অক্সিজেনের অভাব হবে এই অজুহাত দিয়ে মাস্ক না পরা বন্ধ করুন। 

• মহিলাদের পিরিয়ডস্-এর সাথে ভ্যাকসিনের ইমিউনিটির কোনো রকম যোগাযোগ এখনো অবধি পাওয়া যায়নি। তাই Menstruation এর সময় বা শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না এমন কোনো কথা নেই। আপনি নিজের সুযোগ-সুবিধা মতন ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে পারেন। 

• একবার কোভিড হলেও আপনি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারেন। তাই একবার আক্রান্ত হওয়ার পরেও আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ নন। তাই মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে চলুন। 

• হ্যান্ড স্যানিটাইজার যতবার খুশি ব্যবহার করে যায়। Pathogens (বা ক্ষতিকারক জীবাণুরা) অ্যান্টিবায়োটিকের মতন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। 

• 35°C এর বেশি গরমে বা বেশি ঠান্ডায় ভাইরাসের কার্যক্ষমতা কমে যায় এরকম ভাবার কোনো কারণ নেই। 

• তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছে বলে যে কোভিড ভ্যাকসিন নিরাপদ নয়, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। রেকর্ড সময়ে এই ভ্যাকসিন বানানো হলেও একটা ভ্যাকসিন বানানোর প্রতিটা মান্য ( Standard) পরীক্ষা এবং সতর্কতা মেনে চলা হয়েছে। সারা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের একজোট হয়ে কাজ করার কারণেই এত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়েছে ভ্যাকসিন বানানো। 

• ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সবসময়ই ব্যবহার করতে হবে। 

• শরীরচর্চা করবার সময় মাস্ক খুলে রাখাটাই ভালো।কারণ মাস্কের কারণে নিশ্বাস নেওয়া একটু কষ্টদায়ক হতে পারে। তবে অতি অবশ্যই সবার থেকে অন্তত এক-দুই মিটার দূরে থাকবেন। 

• জলে ভাইরাস ছড়ায় না। তবে জলে অন্য সংক্রমিত ব্যক্তির এক মিটারের মধ্যে এলে ভাইরাস ছড়াতে পারে। 

• থার্মাল স্ক্যানারে কোভিড-19 পজিটিভ কিনা জানা যায় না। থার্মাল স্ক্যানারে শরীরে জ্বর আছে কি না মাপা যায় শুধু। কিন্তু জ্বরের কোভিড-19 ছাড়াও অন্য কারণ থাকতে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথা স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ খাবেন না। এবং ডাক্তার স্টেরয়েডের পরামর্শ দিলে অবশ্যই কোর্স কমপ্লিট করুন। 

• অক্সিজেন স্যাচুরেশন একটা নির্দিষ্ট মানের থেকে কমে গেলে বাড়িতে চিকিৎসা করার ভুল করবেন না। রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেই সময় চিকিৎসার আরো অনেক পরিকাঠামো লাগে যা শুধুমাত্র হাসপাতালেই পাওয়া যায় ।

• Chronic Disease কে মোটেও হেলাফেলা করবেন না। Co-morbidityর একটা বড় কারণ এই Chronic Disease. 

সর্বোপরি, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ফেসবুক বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে আসা যে কোনো তথ্যকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবেন না। নিজে কোনো স্ট্যান্ডার্ড উৎস থেকে যাচাই করুন, নাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শুধুমাত্র ডাক্তারের দেওয়া নির্দেশ মতোই ওষুধ খান


চিত্রসূত্র: https://www.who.int/news-room/spotlight/let-s-flatten-the-infodemic-curve

তথ্যসূত্র : 

  1. https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/myth-busters

  2. https://www.muhealth.org/our-stories/covid-19-vaccine-myths-vs-facts

  3. https://static.mygov.in/rest/s3fs-public/mygov_161725058451307401.pdf

  4. https://static.mygov.in/rest/s3fs-public/mygov_162270285951307401.pdf

  5. https://www.mygov.in/covid-19

Comments

Popular posts from this blog

নিশিরাত, স্ট্রীট ল্যাম্প এবং পোকা

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা