ইগ নোবেল মজার বিজ্ঞান : প্রথমে হাসবেন, পরে ভাববেন
By Samik Mukhopadhyay, Second-Year Student, IIT Kharagpur
"কান করে কট্ কট্ ফোড়া করে টন্ টন্" -- সুকুমার রায়ের 'নোট্ বই' কবিতাটা পড়ে হাসেনি, এমন বাঙালি বিরল। কিন্তু সত্যিই কি কখনো ভেবে দেখেছেন, যে এরকম কেন হয় ? বা অন্য উদাহরণ বলতে হলে আমাদের গা চুলকালে আরাম কেন হয় ? বা কখনো খেয়াল করে দেখেছেন কি যে বৃদ্ধদের শরীরের অনুপাতে কানের সাইজ, একজন শিশু বা কিশোরের তুলনায় বেশি হয়? বা কখনো ভেবেছেন কি কোনো প্রাণীর মূত্রত্যাগের সময়ের সাথে তার আয়তন (বা, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে হলে তার ব্লাডারের আয়তন) -এর কি সম্পর্ক?
ভাবছেন কী আবোলতাবোল বকছি! আজ্ঞে না, বিজ্ঞানীরা সত্যিকারের এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন। আর শুধু তাই নয়, একটা আস্ত পুরস্কারও আছে এই ধরনের উদ্ভট কিন্তু লজিক্যাল জিনিস নিয়ে গবেষণার জন্য। তার নাম 'ইগ নোবেল'। 'ইগ' অর্থাৎ বিপরীত। এই পুরস্কার দেয় 'অ্যান্যালস্ অফ ইম্প্রোবাবেল রিসার্চ' (Annals of Improbable Research) বলে এক পত্রিকা। বিষয় ? বিষয়ের কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই। বিজ্ঞানের যেকোনো শাখায় কাজের জন্যই পাওয়া যেতে পারে ইগ নোবেল। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে এক বড় অনুষ্ঠানের মারফত বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এই পুরস্কার।
গত বছর (2020) সালে ফিজিক্স ইগ নোবেল জিতেছেন যুগ্মভাবে দুইজন-- ইভান মাক্সিমোভ আর অ্যান্ড্রি পোটোস্কি। তাঁদের গবেষণার বিষয় ছিল - অতি উচ্চ কম্পাঙ্কে ( High Frequency) কোনো কেঁচোকে কাঁপানো হলে কেঁচোর আকারে কি পরিবর্তন আসবে। আমরা জানি কেঁচো এমনিতে আকারে রৈখিক। ওনাদের গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ কম্পাঙ্কে কেঁচোর দেহ তরল বিন্দুর মতন আচরণ করে। আমরা জানি যে সমস্ত ধরনের জৈবিক কোষের ভেতরে বেশিরভাগ পদার্থই তরল। তাই ওনাদের গবেষণা এটা প্রমাণ করে যে আমরা ফ্লুইড মেকানিক্স এর নানান সূত্র অনেকাংশে জীবদেহেও গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারি। (বিস্তারিত জানতে হলে নীচে দেওয়া লিংকে চলে যান।)
তবে শুধু ওঁরাই নন, আরো অনেক বিষয়েই গতবছর ইগ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। যেমন শান্তিতে ইগ নোবেল পেয়েছে যুগ্মভাবে ভারত ও পাকিস্তান সরকার ( ".... for having their diplomats surreptitiously ring each other’s doorbells in the middle of the night, and then run away before anyone had a chance to answer the door. ")
2000 সালে নেদারল্যান্ডস এর আন্দ্রে গাইম এবং ব্রিটেনের স্যার মাইকেল ব্যারি ইগ নোবেল জেতেন। ওঁরা চৌম্বক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক ব্যাঙকে হাওয়ায় ভাসিয়েছিলেন ( উল্লেখ্য, আন্দ্রে গাইম 2010 সালে নোবেল পুরস্কার পান)।
আবার 2015 সালে ইগ নোবেল পাওয়া কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রমাণ করেন দেহের আকার যেরকমই হোক না কেন, স্তন্যপায়ী (Mammals) প্রাণীদের মূত্রত্যাগের সময় মোটামুটি একই হয়, প্রায় 21 সেকেন্ড (যোগ বা বিয়োগ 13 সেকেন্ড, অর্থাৎ কি না 8 থেকে 34 সেকেন্ড)। যে প্রাণী যত বড় হয় তাদের মূত্রনালীর আকার ও আয়তনও তত বড় হয়। আর তাছাড়া ছোট ও সরু মূত্রনালী হলে তাদের ওপরে ক্রিয়াশীল আসঞ্জন বল (cohesive force)-ও বেশি হয়। তাই ছোট প্রাণীদের মূত্র ফোঁটা ফোঁটা পড়ে। বিজ্ঞানীদের মতে এর কারণ হলো বিবর্তন (Evolution) । মূত্রত্যাগের সময় হল শিকারীর কাছে ধরা পড়বার সবচেয়ে বিপদের সময়। তাই এই সময় যত কম হয়, তত আত্মরক্ষার সুবিধা হয়। সেই জন্যই মোটামুটি সব প্রাণীই কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যে মূত্রত্যাগ সেরে ফেলে।
অর্থাৎ, ইগ নোবেলের সম্পর্কে শুনতে প্রথমে হাস্যকর লাগলেও একটু তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যায় বিষয়টা বেশ যুক্তিযুক্ত এবং বিজ্ঞানমনস্ক। তাই ইগ নোবেলের ওয়েবসাইটে সবচেয়ে ওপরে লেখা আছে, গবেষণা যা প্রথমে হাসায় কিন্তু পরে ভাবায় ("Research that makes people LAUGH and then THINK ")।
আর শেষে একটা মজার তথ্য দিয়ে শেষ করি। ইগ নোবেলের বিজয়ীদের নিজের সম্পর্কে বলার সময় থাকে মাত্র 60 সেকেন্ড। তার বেশি সময় নিলেই দর্শকরাই চিৎকার করে তাকে সরিয়ে দেন। পরে অবশ্য একদিন তিনি সুযোগ পান পুরো গবেষণা ভালো ভাবে বর্ণনা করার। এভাবেই গবেষণাকে মজার এবং জনপ্রিয় করার কাজে এগিয়ে চলেছে ইগ নোবেল।
রেফারেন্স :
খুবই মনোগ্রাহী একটি লেখা।
ReplyDeleteসমৃদ্ধ হলাম❤😌
ReplyDelete